আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান(২৬ জুন, ১৯২৬ - নভেম্বর ৩, ১৯৭৫) বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং
ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক
নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
বর্তমান নাটোর জেলার অন্তর্গত
বাগাতিপাড়ার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে ১৯২৬ সালের ২৬ জুন তারিখে এ এইচ এম
কামরুজ্জামান জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ
মহল্লায়। তিনি বনেদি জমিদার
পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতা আবদুল
হামিদ ও মাতা বেগম জেবুন্নিসা। তার ১২ ভাই বোনের
মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম। তাঁর ডাকনাম ছিল
হেনা।
১৯৫৬ সালে কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে তিনি দুবার
মৌলিক গণতন্র ব্যবস্থায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন৷ ১৯৬৭ তিনি সালে নিখিল
পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা নির্বাচিত হন। আইয়ুব খান সরকারের নির্যাতনের
প্রতিবাদে এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির সমর্থনে ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের
সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে
পুনরায় তিনি রাজশাহী থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷ ১৯৭০ সালে সারা দেশে
অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে৷ এমন সময় শেখ মুজিব ৫জন সদস্য বিশিষ্ট
দলীয় হাই কমান্ড গঠন করেন৷ এই হাই কমান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন
কামরুজ্জামান৷
১৯৭০ সালের নভেম্বরের ১৯৭০
এর নভেম্বরের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণকার্যে সরকারের অনীহা এবং
ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভের পরও আওয়ামী
লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা ইত্যাদি কারণে বাঙালিদের মনে
অসহিষ্ণুতা দেখা দেয়। বাঙালিরা
তখন শেখ মুজিবের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ২৫
মার্চ রাতে পাকিস্তান সরকার নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দশ্যে
সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়, যা
ইতিহাসে অপারেশন সার্চলাইট নাম পরিচিত। এই কুখ্যাত গণহত্যার সময় পাকিস্তানী
বাহিনী শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। কিন্তু তিনি এর পূর্বেই তার দলের নেতা
কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছিলেন। তাই তিনি শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ ও আরও কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বগুড়া হয়ে কলকাতা চলে
যান। সেখানে তার সাথে তাজউদ্দিন আহমদ সহ
অন্যান্য নেতাকর্মীর দেখা হয়। ওখানে তারা সকলে মিলে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। আর সবার সিদ্ধান্তে ১৯৭১ এর ১০
এপ্রিল গঠিত হয় প্রথমঅস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার, এবং ১৭
এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী
এলাকা বৈদ্যনাথ তলায়(পরবর্তীতে মুজিবনগর ) শপথ
গ্রহণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে।
নবগঠিত
মুজিবনগর সরকারে তাকে স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কামরুজ্জামান
ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে তিনি মুক্তাঞ্চল, শরণার্থী
শিবির ও সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে ঐ সময় কামরুজ্জামান সহ আরো তিন
নেতাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করা হয়। ঐ বছরেরই ৩ নভেম্বরভোর
সাড়ে চারটায় ঊক্ত কারাগারের অভ্যন্তরে তাকে সহ আরো তিন নেতাকে কিছু সেনা সদস্য
নির্মমভাবে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
Comments
Post a Comment